২০শে মে, ২০২৫ ইং, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

রাজশাহী ১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক নির্বাচনী মাঠে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে।

আলিফ হোসেন: রাজশাহী ১ (তানোর-গোদাগাড়ী) সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকার ভোটের মাঠে ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির প্রার্থী সাবেক ডাকমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টি, পেট্রাল বোমা হামলা ও অগ্নি সন্ত্রাসের অভিযোগ, দীর্ঘদিন আত্মগোপণে থাকায় ব্যারিস্টার আমিনুলের ইমেজ সংকট ও কমিটি গঠন নিয়ে তার সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বষীল নেতাকর্মীদের মতবিরোধ ইত্যাদি কারনে নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচারণায় ততোই বিএনপির কর্মী সংকট প্রকট হচ্ছে।

ফলে একদিকে বিএনপির কর্মী সংকট অন্যদিকে ব্যারিস্টারের ঘনিষ্ঠ চার সহচর হারিয়ে ব্যারিস্টার আমিনুল দিন দিন প্রায় একা হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে রাজনীতির মাঠে সাবেক ডাকমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আমিনুল হক একটি সুপরিচিত নাম। রাজনৈতিক জীবনে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ঘনিষ্ঠ দু’রাজনৈতিক সহচর একজন শীষ মোহাম্মদ প্রয়াত ও অপরজন আব্দুল মজিদ মাষ্টার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে এছাড়াও তানোর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান এমরান আলী মোল্লা প্রয়াত এবং গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী তার বিপুল কর্মী-সমর্থক নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ফলে রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ চার রাজনৈতিক সহচর হারিয়ে ব্যারিস্টার আমিনুল হক ভোটের মাঠে অনেকটা একা ও কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এতে তার মধ্যে এক ধরণের হতাশা ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে এবং তার মনোবলও ভেঙ্গে পড়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, ভোটের মাঠে নেমে রাজনীতিতে তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে তিনি ব্যাপক তৎপরতা শুরু করলেও তৃণমূলের কাছে থেকে তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। এদিকে তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদ দান, বিদেশে অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ উঠায় ও প্রায় ডজন খানেক মামলা বিচারাধীন ‘স্থগিত’ যা যে কোনো সময় ফের চালু হতে পারে তৃণমূলে এমন কথার প্রচার রয়েছে। আর এসব বিষয় মাথায় নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা তার ওপর আর ভরসা রাখতে পারছে না।

স্থানীয় বিএনপির দায়িত্বশীল সুত্রগুলো বলছে, বিগত দিনে ব্যারিষ্টার আমিনুল হক তার এই চার জন ঘনিষ্ঠ সহচরের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করেই রাজনীতি করেছে তাঁর রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণ এই চার সহচর নির্ভর। অথচ যেই তৃণমূল রাজনৈতিক দলের প্রাণ সেই তৃণমুল নেতাকর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। এসব কারণে তানোর ও গোদাগাড়ী এলাকার বিএনপির একটি বড় অংশ ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের ওপর নাখোশ ও সময় মত প্রতিশোধ নেয়ার অপেক্ষায় ছিল। যে কারণে ভোটের মাঠে তাঁর ডাকে তৃণমুল নেতাকর্মীরা তেমন সাড়া দিচ্ছে না বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবীণ, বর্ষিয়ান ও প্রভাবশালী দুই নেতা শীষ মোহাম্মদ ও এমরান আলী মোল্লা প্রয়াত এবং আব্দুল মজিদ মাষ্টার ও ইসাহাক আলী তাদের অনুগত কর্মী বাহিনী নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে আওয়ামী যোগদান করায় এখানে বিএনপির রাজনীতিতে চরম বিশৃংঋলা ও নিস্ক্রীয়তা দেখা দিয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে দলের চেইন অব কমান্ড কেউ কারো নেতৃত্ব মানতে নারাজ। কেউ কেউ আবার নিজের সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষার জন্য গোপণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাত করে চলছে। এসব কারণে এখানে বিএনপিতে দেখা দিয়েছে একাধিক কমিটি ও উপ-কমিটি ফলশ্রতিতে বিএনপিতে এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।

বিএনপিকে চাঙ্গা করতে ইতমধ্যে সদস্য সংগ্রহ ও নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তৃণমূলের কাছে থেকে তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ব্যারিস্টার আমিনুলের নির্দেশে তানোর উপজেলা ও মুন্ডুমালা পৌর বিএনপির পকেট কমিটি গঠন করায় বিএনপিতে কোন্দল ও মতবিরোধ-এ নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তানোর ও গোদাগাড়ী বিএনপির একটি বৃহত অংশ ব্যারিস্টার আমিনুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ভোটের মাঠে স্বপক্ষ ত্যাগ করে প্রতিপক্ষের দিকে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে বিএনপির জৈষ্ঠ নেতারা মনে করছে। এসব কারণে নির্বাচনের মাঠে ব্যারিস্টার আমিনুল হক দিন দিন প্রায় একা হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত তার নেতাকর্মীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

প্রকাশিত:

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ